রোকন মিয়া,স্টাফ রিপোর্টার উলিপুর: কুড়িগ্রামে আকস্মিক বন্যার প্রভাবে তিস্তা নদীর পানিতে চরাঞ্চল ফসলের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। বিপদসীমার ৩৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও বিকাল ৩টার দিকে পানি কমে গিয়ে বিপদসীমার ৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। উজানের ঢলে পানি বেড়ে কুড়িগ্রাম জেলায় প্রায় ১০ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। শুরু হয়েছে নদী ভাঙনও।
মঙ্গলবার (২০ অক্টোবর) উলিপুর উপজেলার থেতরাই এলাকায় চর থেকে গরুর জন্য ঘাস নিয়ে ফেরার সময় রাতের টানে ভেসে গেছেন বদিউজ্জামান নামে এক কৃষক।
হঠাৎ করে বন্যার ফলে তিস্তা নদী তীরবর্তী রাজারহাট, উলিপুর ও চিলমারী উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে প্রায় ১০ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পরেছে। এত ঘরবাড়ী, আবাদি জমি, গাছপালার ক্ষতি হয়েছে। বরোপীট ও প্রায় ৪শ’টি পুকুরের মাছ ভেসে গেছে।
কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মো. রেজাউল করিম  বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন। এসময় তিনি বন্যা কবলিতদের মাঝে শুকনো খাবারের ব্যবস্থা করেছেন। পরিদর্শন কালে তার সাথে উপস্থিত ছিলেন রাজারহাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার নূরে তাসনিম ও ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান রবীন্দ্রনাথ কর্মকার।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক কৃষিবিদ মঞ্জুরুল হক জানান, হঠাৎ ফ্লাস ফ্লাডে তিস্তা নদী এলাকায় ১৫২ হেক্টর আধা-পাকা ধান, সবজি, আলু এবং বাদাম নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে।
ঘরিয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের গতিয়াসাম এলাকার কৃষক হাসমত আলী জানান, হঠাৎ করে তীব্র রাতে আমার আধাপাকা এক বিঘা জমির ধান নষ্ট হয়ে গেছে। পাশর্বর্তী সরিষাবাড়ি গ্রামের রহিজল ও কামাল হোসেন জানান, পানির এমন তীব্র রাতে ছিল যে, আমরা ধারণাই করতে পারিনি। মূহুর্তের মধ্যে ঘরের বেড়া, খড়ের গাদা, হাড়ি-চুলা সব রাতের তোড়ে ভেসে নিয়ে গেল।
বিদ্যানন্দ চরের গৃহবধূ জমিলা ও কাচরণ জানান, আমরা চরের জমিতে বাদাম লাগিয়েছিলাম। বন্যা আর সম্পূর্ণ বালু পরে নষ্ট হয়ে গেছে।
রাজারহাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার নুরে তাসনিম জানান, উজান থেকে নেমে আসা পানির রাতে রাজারহাট উপজেলার ঘরিয়ালডাঙ্গা, বিদ্যানন্দ ও নাজিমখান ইউনিয়নের কিছু অংশ নিয়ে প্রায় ৩ হাজার পরিবার বন্যা কবলিত হয়ে পরেছে। আমারা সেগুলো যাচাই বাচাই করছি। এখন পর্যন্ত এক হাজার অধিক বন্যা কবলিত পরিবারকে শুকনো খাবার, খিচুরি ও খাবার প্যাকেট তৈরি করে বন্যা কবলিতদের মাঝে বিতরণ করছি।
এ ব্যাপারে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, ভাঙন কবলিত ৫টি এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা চলছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন উজানে বৃষ্টিপাত কমলে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তিস্তার পানি বিপদসীমার নিচে নেমে আসবে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম রাজারহাটের ঘরিয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নে বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শন করতে গিয়ে জানান, ক্ষতিগ্রস্তদের উদ্ধারসহ তালিকা নিরূপণ করতে বলা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ২০ মেট্রিক চাল এবং ৪ লাখ টাকা এবং শুকনা খাবার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।